জুমার দিনের ফজিলত ও আমল

 

শুক্রবার জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টএ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ , এই পোস্ট এর মধ্যে আপনারা জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল সম্পর্কে জানতে পারবেন , এবং এই পোস্ট এর সূচিপত্রে দেয়া হলো :

১।  জুমার দিনের ফজিলত ও আমল,

২।  জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল | জুমার দিন শ্রেষ্ঠত্ব

৩।  জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,

৪।  জুমার দিন মসজিদে আগে আসার ফজিলত,

৫। জুমার দিনের ১১ টি আমল,

৬।  জুমার দিনের ১৫ টি আমল,

৭।  জুমার দিনের বিশেষ 6 টি আমল,

৮। শুক্রবার আসরের পরের আমল,

জুমার দিনের ফজিলত ও আমল

জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি সেই জন্য আল্লাহ তালা কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি সূরা নাজিল করেছেন। এমন কিছু সময় এবং দিন রয়েছে যার মধ্যে অল্প আমল করলেই অনেক সওয়াব পাওয়া যাই যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো জুময়ার দিন (শুক্রবার) সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুময়ার দিন শ্রেষ্ঠতম জুমার দিনের ফজিলত অনেক রয়েছে।  এই পোস্ট এ  বিবরণ দেব ইনশাল্লাহ :

জুমার দিনের ফজিলত 

ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র জুমা রাত-দিন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে। জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদ দিনের নেয়। এ দিন ইসলামী ইতিহাসে বড় বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুময়ার দিন শ্রেষ্ঠতম দিন। জুমার দিনের অনেক ফজিলত রয়েছে। জুমার দিনে ফজিলত অর্জনের সুযোগ রয়েছে । জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল | জুমার দিন শ্রেষ্ঠত্ব

জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি সূরা নাজিল করা হয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন আযান দেওয়া হয় নামাজের আহ্বানের জন্য, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচাকেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে জানতে। (সূরা জুমা- ০৯)।

আরো পড়ুনঃ গায়েবানা জানাযার বিধান

জুম্মার দিন আদম আলাইহিস সাল্লাম কে সৃষ্টি করেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করেন আর এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে। 

عن أبي هُرَيرَة رَضِيَ اللهُ عنه، عنِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم أنَّه قال:خيرُ يومٍ طَلعَتْ فيه الشَّمسُ يومُ الجُمُعة؛ فيه خَلَقَ اللهُ آدَمَ، وفيه أُدْخِلَ الجَنَّةَ، وفيه أُخرِجَ منها، ولا تقومُ السَّاعةُ إلَّا في يومِ الجُمُعة (رواه مسلم رقم الحديث 854)

অর্থ দিন সমূহের মধ্যে জুম’আর দিন শ্রেষ্ঠ এই দিনে আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সাল্লাম কে সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং জান্নাত থেকে বের করেন এবং এই দিনে অর্থাৎ জুম্মার দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে (মুসলিম শরীফ ৮৫৪) 


عن ابي هريرة رض قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من راح إلى الجمعة في الساعة الأولى فكأنما قرب بدنة، ومن راح في الساعة الثانية فكأنما قرب بقرة، ومن راح في الساعة الثالثة فكأنما قرب كبشًا أقرن، ومن راح في الرابعة فكأنما قرب دجاجة، ومن راح في الخامسة فكأنما قرب بيضة. (البخاري رقم الحديث.881)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে সবার প্রথম মসজিদে প্রবেশ করবে, তার আমল নামাই যেন একটি উট কুরবানি করার সাওয়াব নিকি লিখা হলো, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করার নিকি লিখা হলো। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করার নিকি লিখা হলো। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করার নিকি লিখা হলো। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সব (সগিরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।’ (মুসলিম; ২৩৩)।


জুমার দিনের ফজিলত জুময়ার নামাজে যাওয়ার সময় প্রতি কদমে (পা ফেলায়)এক বছর নফল নামাজ ও এক বছর নফল রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যাবে। হযরত আউদ ইবনে আউস ছাক্বাফী (রাঃ) বলেন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি জুম’আর দিন-

জুমার দিনের ৬ টি আমল

১। সুন্নত তরিকায় ভালোভাবে গোসল করবে। 
২। সকাল সকাল মসজিদে আসার জন্য রওনা দিবে
৩। পায়ে হেঁটে যাবে
৪। ইমামের নিকট বসবে।
৫। গুরুত্বসহকারে খুতব শুনবে।
৬। অহেতুক কাজ ও কথা থেকে বেঁচে থাকবে। তাহলে তার প্রতি কদমে এক বছর নফল রোজা রাখার এবং এক বছর নফল নামাজ পড়ার সাওয়াব তার আমলনামায় দেয়া হবে। 
(সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদীস নং- ১৭৫৮/ নাসায়ী, হাদীস নং- ১৩৮৪, তিরমিযী, হাদীস নং- ৪৯৬/ আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৪৫)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত আছে যে  নবী কারীম  ( স: ) ইরশাদ করেন। যে ব্যক্তি শুক্রবারে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে তার জন্য এমন নূর আলোকিত হবে যা সে জমা থেকে পরের জমা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে সেই ব্যক্তি থেকে কাবা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। (বাইহাকী ফী সুনানীল কুবরা ৩/৩৫৩)


 হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।


অন্য রেওয়ায়েতে আছে এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গোনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হচ্ছে যে, কবিরা গোনাহ তাওবা করা ছাড়া ক্ষমা হয় না।


তবে যদি কেউ পুরো সুরা তেলাওয়াত করতে না পারে তবে ন্যূনতম সুরাটির প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করায়ও রয়েছে এ সব বিশেষ ফজিলত।

শুক্রবার আসরের পরের আমল

হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন জুমার দিন একটি মুহূর্ত আছে । যে সময় যেকোন মুসলমান আল্লাহ তাআলার নিকট যা কিছু প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা দান করবেন ।কাজেই তোমরা আসরের পর দিনের শেষ মুহূর্তে সে সময়টা তালাশ করো। ( আবু দাউদ১/১৫০)

আশি বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব

হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর আপন স্থান থেকে ওঠার পুর্বে এ দরুদ শরীফ আশি বার পাঠ করবে তার আশি বৎসরের পাপ মাফ করে দেয়া হবে আর আমলনামায় আশি বছরের নফল ইবাদতের নেকী লেখা হবে।

দরুদ শরীফ 

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدَن النَّبِيِّ الأمِّيِّ وَعَلَى الِه وَسَلِّمْ تَسْلِيْمًا

উচ্চারণ : আল্লাহ হুম্মাহ সাল্লিআলা মুহাম্মাদান নাবিয়্যিম ম্যেইয়ে ওয়ালা লিওয়াসাল্লিম তাসলিমীন। 

অর্থ : হে আল্লাহ, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর বরকত দান করুন।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন