সন্তানের প্রতি বাবা-মার যে ভুলগুলোর জন্য অনুশোচনা করতে হয়

 


পৃথিবীর সব পিতা মাতাই তাদের সন্তানের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করে থাকেন ।অনেক বাবা- মা তাদের সন্তানদের কে খেলনা কিনে দিতে একটু বেশি পরিশ্রমও করেন আবার অনেক বাবা- মা তাদের সন্তানদের কে খেলনা দিয়ে বড় করতে চাননা, তারা তাদের সন্তানদের নিয়মানুবর্তিতা এবং স্থির লক্ষে পোঁছানোর জন্য সে পথেই পরিচালিত করেন ।কিন্তু এর বিপরিত চিত্রও আমারা দেখতে পায় । খুব অল্প বাবা- মা আছেন তারা তাদের সন্তানদের ভালর জন্য তাদের আনন্দের জন্য সবকিছু উজার করে দেই এবং সন্তানদের নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে সাহায্য করে । সব বাবা- মায় তাদের সন্তানকে সুসন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে চাই । সন্তানকে সুসন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে চাইলে বাবা-মাকে সন্তানকে শিশুবেলা থেকেই সেটা শুরু করতে হবে । কিন্তু শিশুকে গড়ে তোলার সময় বাবা-মা এমন কিছু ভুল করে থাকেন যার জন্য ভবিষ্যতে গিয়ে তাদেরকে অনুশচনা করতে হয় ।


প্রথম কয়েকটা বোছোড় শিশুর ম্যাজিক এর মত কেতে যায় ।এই বয়সটা শিশুদের হেসে খেলে বেড়ানোর সময় । আর এই সময়টাতেই শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটে এবং ভবিষ্যতে তার বাবা,মা,সমাজ,পরিবার এর জন্য কি কি করবে তার ভিত্তি স্থাপন করে । আর এই সময় শিশুদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তার ভবিষ্যতে জীবনে দাগ কাটে । আর এই সময় বাবা-মায়ের আচরন শিশুদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে ।তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই সন্তানের প্রতি বাবা-মার কোন আচরণগুলি ভবিষ্যতে অনুশচনার কারন হয়ে দাড়াই ।


শিশুদের প্রতি সজাগ নজর না দেয়া

শিশুদের শিশু থেকে বড় হয়ে ওঠার জন্য বড়দের সান্নিধ্য খুব বেশি প্রয়োজন । আর তাই শিশুদের সাথে তাদের বাবা-মায়ের যোগাযোগ বাড়ানো খুব দরকার । যদি বাবা-মায়ের সাথে শিশুদের যোগাযোগ না বাড়ানো যায় তাহলে শিশুরা একাকিত্তে ভোগে এবং নিজেদেরকে ক্ষুদ্র মনে করে যা ইচ্ছে তাই করতে থাকে ।যেহেতু শিশুরা তাদের জীবনের সম্পর্কে কিছু জানেনা তাই তারা এমন কিছু ভুল করে বসে যেটা তার ভবিষ্যত জীবনের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে ।

শিশুদের জরিয়ে না ধরা 


গবেষকরা গবেষণায় দেখেছেন যে  বাবা-মায়ের তাদের শিশুদের কে আলিঙ্গন বা জরিয়ে ধরা  শিশুদের  শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য  খুব জরুরী একটা বিষয় । অনেক বাবা-মায় অজ্ঞতা বা কাজের চাপে তাদের  শিশুদের আলিঙ্গন বা জরিয়ে ধরতে ভুলে যান । আর এই কারনে  শিশুদের মধ্যে শূন্যতাবোধ তৈরি হয় ।

শিশুদের সাথে ছবি না তোলা

ছবি তোলা এটা আর কি এমন কাজ । এখন চাইলেই যেকোনো সময়ই ছবি তোলা যায় ।  শুধু ছবিনা আমরা আমাদের সন্তানদের সাথে ভিডিও করতে পারি । ছোট্ট এই কাজটি শিশুদের বাবা-মায়ের প্রতি তার ভালবাসা আরও অনেক গভীর করে তোলে এবং এতে শিশুদের মানসিক পূর্ণতা বিকাশে সাহায্য করে । শিশুদের ছোটবেলার এই সব স্মৃতি তাদের পরবর্তী জীবনে বাবা-মায়ের প্রতি আরো দায়িত্বশীল কোড়ে তোলে।

শিশুর প্রথম কথা লিখে রাখেন না 


একটি সুন্দর স্মৃতি শিশুদের জীবন কে আরও অনেক বেশি সুন্দর এবং মধুময় করে তুলতে পারে । আপনি যদি সন্তানের প্রথম বুলি লিখে রাখেন তাহলে তার প্রতি আপনি কতটা যত্নশীল ছিলেন সেটা প্রকাশ পায় । যদিও এটা খুব বেশি কঠিন কাজ না তবুও অনেক বাবা-মা এটি উপলব্ধি করেন না । অথচ একটু মনযোগী হলেই এই কাজটা করা সম্ভব ।

শিশুর সৃজনশীলতার প্রতি নজর না দেওয়া

আমরা এটা বলছি না যে শিশুর  সৃজনশীলতার প্রতি নজর দিলে সে অনেক বড় গায়ক হবে বা অনেক বড় চিত্রশিল্পী হবে । কিন্তু আমরা যদি তার সৃজনশীল কাজকে উৎসাহ দেই তাহলে পরবর্তীতে তারা এটার সুফল পাবে । এতে তারা রুচিশীল এবং নান্দনিক হয়ে উঠবে । 

শিশুদের প্রতি কঠোর আচরন করা 

শিশুরা ভুল করবেই আর এই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে নিতেই সে একসময় একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠবে । কিন্তু খারাপ বা কঠোর আচরন কোন শিশুই নিতে পারেনা । খারাপ আচরন শিশুদের কোমল মনে বিদ্বেষ তৈরি করে । আর তাই তাকে বকাবকি না করে একটু কৌশলে তার ভুলগুলো তাকে ধরিয়ে দিতে হবে । 


শিশুর চাওয়াকে গুরুত্ব না দেয়া 

আমরা নিজেরাও এই কথাগুল শুনে বড় হয়েছি যে তুমি এখনি বড় হওনি, এটা করার বয়স তোমার হয়নি, বড় হলে কর । শিশুকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সব বাবা-মায় এই কথা  গুল বলেন । কিন্তু এখানে শিশুর চাওয়াটা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে । তখন সে হিনমন্য স্বভাব নিয়ে বড় হয় । তার চাওয়া যদি যোক্তিক  নাও হয় তাহলেও শুনুন এবং তাকে বুঝিয়ে বলুন যে তার এই কাজগুল করার সময় এখনও হয়নি ।


 শিশুদের যথেষ্ট আনন্দের ব্যাবস্থা না করা 


শিশুদের মন অনেক কোমল আর এই কোমল মন সব সময় আনন্দ খুজে বেড়ায় । তারা বেরাতে চাই, হাঁসতে চাই , খেলতে চাই । আনন্দের মাঝে বড় হওয়া শিশুদের থেকে দুঃখে ভারাকান্ত শিশুরা ভবিষ্যতে অনেক বেশি পিছিয়ে থাকে । কারন তাদের মানসিক বিকাশ ভালোভাবে হয়না । তাদের আচার আচরণ স্বাভাবিক হয়না । 

অন্য মানুষের কথায় কান দেয়া 


সমাজে হাজার রকম মানুষের হাজার রকম চাওয়া । আর এই হাজার রকম চাওয়া যদি আপনার শিশুর উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা আপনাকেই প্রতিহত করতে হবে । কারন সন্তানটা আপনার, যারা অযথা উপদেশ দিয়ে বেড়াই তাদের কথাই কান দেবেন না । আপনি যদি তাদের কথা মত আপনার শিশুকে বড় করতে চান তাহলে আপনার শিশু তার নিজস্বতা হারাবে । ভবিষ্যৎ জীবনে যার ফল ভালো নাও হতে পারে । 

শিশুর  গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার কাছে না থাকা

শিশুরা তার বাবা-মাকেই সবচেয়ে আপনজন হিসাবে জেনে আসে । এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো হয়ত আমাদের কাছে গুরুত্তবহন করে না কিন্তু শিশুদের কাছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাই তারা ঈদ, জন্মদিন,পুজা জাতীয় বিভিন্ন দিবসে তারা তাদের বাবা-মায়ের সাথে আনন্দ করে কাটাতে চায় । আর এই বিশেষ সময়ে যদি শিশুরা বাবা-মাকে কাছে না পায় তাহলে তারা খুব অসহায় বোধ করে । এক ধরনের একাকীত্ব তাকে ঘিরে ধরে এবং বড় হলেও সেটা কাটেনা । যাতে করে সন্তানেরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে ।  বিশ্বাস হারানোর পরিনতি যারা বরন করেছেন শুধু তারায় জানেন ।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন