✈️ মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা – পূর্ণাঙ্গ গাইড
ভূমিকা
মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় দেশ যেখানে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ কাজ, পড়াশোনা কিংবা ভ্রমণের জন্য ভিসা নিয়ে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ খোঁজে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ভিসার ধরন হলো কলিং ভিসা (Calling Visa)।
বাংলাদেশে অনেকেই কলিং ভিসা নিয়ে বিভ্রান্ত থাকেন। কেউ একে চাকরির অফার লেটারের সমান মনে করেন, কেউ আবার এটাকে ফ্রি ভিসার সমার্থক মনে করেন। আসলে কলিং ভিসা হলো মালয়েশিয়ার সরকারের অনুমোদিত একটি বৈধ ভিসা, যা সাধারণত কাজের উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব—কলিং ভিসা কী, কারা পেতে পারে, আবেদন প্রক্রিয়া, খরচ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সুবিধা-অসুবিধা এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়।
অধ্যায় ১ : মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা কী?
কলিং ভিসা মূলত এক ধরনের কাজের ভিসা (Work Permit)। মালয়েশিয়ার কোনো বৈধ নিয়োগকর্তা যখন বিদেশি শ্রমিক বা কর্মী নিয়োগ দিতে চান, তখন তিনি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট ও হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেন। এই অনুমোদনের ভিত্তিতে শ্রমিকের জন্য যে ভিসা ইস্যু করা হয়, সেটিই কলিং ভিসা নামে পরিচিত।
সহজভাবে বললে:
-
মালয়েশিয়ায় চাকরি আছে → নিয়োগকর্তা অনুমতি নিলেন → সরকার অনুমোদন দিল → শ্রমিকের নামে ভিসা ইস্যু হলো → এই ভিসাই কলিং ভিসা।
এটি সরাসরি কাজের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়, অর্থাৎ এ ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে।
অধ্যায় ২ : কারা কলিং ভিসা পেতে পারে?
- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ যেসব দেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি আছে, সেই দেশের নাগরিকরা কলিং ভিসার জন্য যোগ্য।
- সাধারণত অদক্ষ (Unskilled) এবং অর্ধদক্ষ (Semi-skilled) শ্রমিকরা এ ভিসা পান।
- কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন, সেবা খাত (রেস্টুরেন্ট, ক্লিনার, হোটেল), এবং প্লান্টেশন—এই সব সেক্টরে কলিং ভিসা সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়।
অধ্যায় ৩ : কলিং ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
ধাপ–১ : নিয়োগকর্তার অনুমোদন
মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা প্রথমে সরকারের কাছে আবেদন করবেন। তিনি প্রমাণ করবেন যে, তার প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন।
ধাপ–২ : অনুমোদনপত্র (Approval Letter)
সরকার যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিলে সেই অনুমোদনপত্র শ্রমিকের নামে ইস্যু হয়।
ধাপ–৩ : ভিসা স্টিকার ও এন্ট্রি ক্লিয়ারেন্স
শ্রমিক তার দেশের মালয়েশিয়ান হাইকমিশন বা দূতাবাসে গিয়ে পাসপোর্টে ভিসা স্টিকার লাগিয়ে নেন।
ধাপ–৪ : মালয়েশিয়ায় প্রবেশ
ভিসা হাতে পেয়ে শ্রমিক মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেন। প্রবেশের পর নিয়োগকর্তা আবার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে প্লাস্টিক আই-কার্ড (Temporary Employment Pass) সংগ্রহ করেন।
অধ্যায় ৪ : প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কলিং ভিসার জন্য সাধারণত যে কাগজপত্র প্রয়োজন—
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ২ বছরের মেয়াদ থাকতে হবে)
- অনুমোদনপত্র (Calling Visa Approval Letter)
- মেডিকেল রিপোর্ট (গ্যামকা বা অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার থেকে)
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- এজেন্ট বা রিক্রুটিং এজেন্সির কাগজপত্র
- দূতাবাসে নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার রসিদ
অধ্যায় ৫ : কলিং ভিসার খরচ
কলিং ভিসার খরচ বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য গড় খরচ সাধারণত ২–৩ লক্ষ টাকা (মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত হিসেবে প্রায় RM ৮,০০০ – ১০,০০০)।
খরচের ভাঙন—
- ভিসা প্রসেসিং ফি
- মেডিকেল টেস্ট
- এয়ার টিকেট
- ইন্স্যুরেন্স
- এজেন্ট/রিক্রুটিং চার্জ
- ইমিগ্রেশন ফি
অধ্যায় ৬ : কলিং ভিসার মেয়াদ
- সাধারণত ২ বছরের জন্য কলিং ভিসা দেওয়া হয়।
- মেয়াদ শেষে নবায়ন করা যায় (নিয়োগকর্তা চাইলে)।
- সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত একজন শ্রমিক কলিং ভিসা নবায়ন করতে পারেন।
অধ্যায় ৭ : সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা:
- বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ।
- চাকরির নিশ্চয়তা (নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার কাছে)।
- ভিসা নবায়নযোগ্য।
- সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার আইনি কাঠামোর মধ্যে পাওয়া যায়।
অসুবিধা:
- নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করা কঠিন।
- বেতন তুলনামূলকভাবে কম।
- কখনও কখনও শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হন।
- দীর্ঘ সময় পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়।
অধ্যায় ৮ : প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
বাংলাদেশে অনেক এজেন্ট ভুয়া কলিং ভিসা দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাই—
- শুধুমাত্র বিএমইটি (BMET) অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করতে হবে।
- ভিসার অনুমোদনপত্র আসল কিনা দূতাবাসে যাচাই করতে হবে।
- কখনোই “ফ্রি ভিসা” নামে প্রলুব্ধ হয়ে টাকা দেবেন না।
- কাগজপত্র না দেখে কাউকে টাকা দেয়া যাবে না।
অধ্যায় ৯ : মালয়েশিয়ায় জীবনযাপন
- গড় মাসিক বেতন ১,৫০০–২,০০০ রিঙ্গিত (বাংলাদেশি প্রায় ৪০–৫০ হাজার টাকা)।
- ওভারটাইম করলে বেতন আরও বাড়ে।
- থাকার জায়গা ও খাবার অনেক সময় কোম্পানি সরবরাহ করে।
- তবে কঠোর পরিশ্রম ও শারীরিক শ্রম দিতে হয়।
✅ কারা কলিং ভিসা পেতে পারে?
- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ যেসব দেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার শ্রম চুক্তি আছে
- কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন, রেস্টুরেন্ট/হোটেল, ক্লিনার, প্লান্টেশন ইত্যাদি খাতে শ্রমিক
- সাধারণত অদক্ষ (Unskilled) ও অর্ধদক্ষ (Semi-skilled) কর্মী
📝 কলিং ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
- নিয়োগকর্তার আবেদন – মালয়েশিয়ার কোম্পানি সরকারের কাছে অনুমতি চায়
- অনুমোদনপত্র (Approval Letter) – শ্রমিকের নামে জারি হয়
- ভিসা স্টিকার – নিজ দেশের মালয়েশিয়া হাইকমিশন থেকে নেওয়া হয়
- মালয়েশিয়ায় প্রবেশ – এরপর ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে Temporary Employment Pass সংগ্রহ
📂 প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ২ বছর মেয়াদ)
- অনুমোদনপত্র (Calling Visa Approval Letter)
- মেডিকেল রিপোর্ট (গ্যামকা/অনুমোদিত সেন্টার)
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ভিসা ফি জমার রসিদ
💰 খরচ কত?
বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসার খরচ গড়ে ২–৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে থাকে—
- ভিসা প্রসেসিং ফি
- মেডিকেল টেস্ট
- এয়ার টিকেট
- ইন্স্যুরেন্স
- এজেন্ট/রিক্রুটিং চার্জ
⏳ ভিসার মেয়াদ
- প্রথমে ২ বছর মেয়াদে দেওয়া হয়
- নিয়োগকর্তা চাইলে নবায়নযোগ্য
- সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত নবায়ন সম্ভব
অধ্যায় ১০ : উপসংহার
মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা হলো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকদের জন্য একটি বড় সুযোগ, তবে একই সঙ্গে বড় দায়িত্বও। বৈধ উপায়ে, সঠিক এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করলে এটি জীবন পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। কিন্তু ভুয়া এজেন্ট বা প্রতারণার ফাঁদে পড়লে বিপদে পড়তে হয়।
তাই—
👉 সচেতন হতে হবে,
👉 যাচাই-বাছাই করতে হবে,
👉 বৈধ উপায়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন